আত্মবিশ্বাসী ইনিয়েস্তা সতর্কও

231538kalerkantho-3-2018-05-31-10

বার্সেলোনাকে তিনি এরই মধ্যে বিদায় জানিয়ে ফেললেও স্পেনকে এখনো নয়। এবারের বিশ্বকাপ খেলেই জাতীয় দলের জার্সিটাও তুলে রাখবেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। তাঁর বিদায়ী বিশ্বকাপটা কি সাফল্যের রঙে রঙে রাঙিয়ে দিতে পারবে ২০১০-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা?

যেভাবে দাপটের সঙ্গে বাছাইপর্বের বাধা পেরিয়েছে স্পেন, তাতে রাশিয়া বিশ্বকাপে চূড়ান্ত সাফল্যের দৌড়ে স্প্যানিশদের রাখা যেতেই পারে। কোচ ইউলেন লোপেতেগুইয়ের অধীনে দারুণ গোছানো দল হিসেবেই বিশ্বকাপে নামছে স্পেন। যে দলে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের দারুণ এক মিশেলও আছে। দুয়ে মিলে বহু দূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে বাধাও নেই কোনো।

কিন্তু বহু দিন থেকেই স্প্যানিশ মাঝমাঠের ‘প্রাণভোমরা’ হয়ে থাকা ইনিয়েস্তা তাঁর বিদায়ী বিশ্বকাপ সামনে রেখে নিজের ভাবনার পরিধি এখনই অত দূর বিস্তৃত করতে রাজি নন। রাজি নন দাপুটে বাছাইপর্বের জন্য উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাসে উড়ে যেতেও। নিজ দলের শক্তি-সামর্থ্যে অগাধ আস্থা থাকলেও যথেষ্ট সাবধানী তিনি। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই তাঁর এ অবস্থান। কারণ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ২০১৪-এর ব্রাজিল বিশ্বকাপে গিয়ে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ার দুঃসহ অতীত এত সহজে ভোলেন কী করে তিনি! এই চরম ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ছিল ২০১৬-এর ইউরোতেও। গ্রুপে ক্রোয়েশিয়ার পেছনে থেকে রানার্স-আপ হলেও শেষ ষোলোতেই থেমে যায় স্পেনের অগ্রযাত্রা। ওই দুটো ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার বড় স্বপ্ন দেখার আগে রাখঢাক ইনিয়েস্তার।

তাই আগাম কিছু বলে দিয়ে বাজার গরম করার চেয়ে ধাপে ধাপে এগোনোর চিন্তারই পক্ষপাতী বিশ্বকাপ ছাড়াও ২০০৮ এবং ২০১২-এর ইউরোজয়ী এই তারকা ফুটবলারের। যদিও নিজ দলের সামর্থ্য নিয়ে বরাবরই আস্থাশীল ইনিয়েস্তা এও বলে রাখলেন, ‘আমাদের দলটি কিন্তু দারুণ। অভিজ্ঞদের সঙ্গে দুর্দান্ত কিছু তরুণের মিশ্রণেই এই দল।’ সেই সঙ্গে আছে প্রবল প্রতাপে বাছাইপর্ব পেরিয়ে যাওয়ার সুখস্মৃতিও। তাই বলে সাফল্য নিশ্চিত বলে ধরে নেওয়ার চিন্তায় সায় নেই ইনিয়েস্তার। তিনি বরং অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পা রাখতে চান মাটিতেই, ‘এটা ঠিক যে আমরা অনেক প্রত্যাশা নিয়েই বিশ্বকাপে যাব। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের জন্য দুটো সতর্কবার্তাও আছে। যার একটি আমরা পেয়েছিলাম ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে। আরেকটি ব্রাজিল বিশ্বকাপে। যার অর্থ হলো আমাদের পা মাটিতেই রাখতে হবে।’

পা মাটিতে রেখে এক পা, এক পা করে এগোতে চান। প্রতিটি ধাপে যদি নিজেদের চেনা ছন্দে দেখা দেওয়া যায়, তাহলেই শুধু শিরোপার কথা ভাববেন ইনিয়েস্তা। তাঁর কথা, ‘আমরা একটি করে ম্যাচ ধরে ধরে এগিয়ে যেতে চাই। প্রতিটি ধাপে যদি আমরা আমাদের কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করতে পারি, তাহলেই শুধু আমরা শিরোপার জন্য ঝাঁপাতে পারব।’ রাশিয়া বিশ্বকাপে ১৫ জুন স্পেনের প্রথম ম্যাচটিই ‘বিগ ম্যাচ’। কারণ সেই ম্যাচে যে তাঁদের প্রতিপক্ষ ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। ধারণা করা হচ্ছে, এই ম্যাচ দিয়েই নির্ধারিত হয়ে যাবে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়নশিপ। গ্রুপের অন্য দুই প্রতিপক্ষ ইরান এবং মরক্কো হওয়ায় পর্তুগাল আর স্পেনের মধ্যেই গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াই সীমাবদ্ধ বলে বেশির ভাগ মত। বাছাইপর্বের পরিসংখ্যান অবশ্য স্পেনকেই নিরুঙ্কুশ ফেভারিট বলে মানার জন্য যথেষ্ট। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে ‘জি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করে স্পেন। তাদের পরিসংখ্যানও ঈর্ষণীয়। কারণ বাছাইপর্বের ১০ ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছে ৩৬ বার, আর নিজেরা হজম করেছে মোটে তিন গোল! বাছাইপর্বে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকেও বিধ্বস্ত করেছে ৩-০ গোলে। কাজেই বাছাইপর্ব এবার বিশ্বকাপ অভিযানে স্প্যানিশদের জন্য অফুরান অনুপ্রেরণার উৎসই হওয়ার কথা। কিন্তু ইনিয়েস্তার যে সবশেষ বিশ্বকাপ এবং ইউরোর ব্যর্থতাকেও বড় ভয়। তাই খুব সাবধানীও! ফিফা