কোথায় যাব কিভাবে যাব জানি না’

0155451_kalerkantho-2018-28-pic-5

ফেনী দাগনভূঞার নারী বিবি রোজিনা। সৌদি আরবে তিন মাস ১৫ দিন থেকে গতকাল রবিবার রাতে দেশে ফিরেছেন। আর্থিক সচ্ছলতার আশায় সেখানে কাজের জন্য গিয়ে হয়েছেন চরম নির্যাতনের শিকার। অনেকটা শূন্যহাতে দেশে ফিরে পড়েছেন আরেক বিপাকে। বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রহণের জন্য আসেনি পরিবারের সদস্যরা। স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়ে রয়েছেন সন্দিহান। শুধু রোজিনা নন, অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে গতকাল সৌদি থেকে ফেরত আসা ৪০ নারী কর্মীর কাহিনি প্রায় অভিন্ন। এক দুর্বিষহ সময় পেরিয়ে দেশে ফিরে এসে তাঁরা সবাই অসহায় বোধ করছেন।

গতকাল রাত সোয়া ৮টায় বিমানবন্দরের ২ নম্বর টার্মিনাল দিয়ে বের হচ্ছিলেন বিবি রোজিনা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মেয়ে সুমাইয়া বৈশাখী ছাড়া এখন আমার কেউ নেই। কেউ আসেনি আমাকে নিতে। সৌদি আরবে যেখানে কাজে ছিলাম, বাসার মালিক নির্যাতন করছে।’ একই ফ্লাইটে ফেরা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সালমা বেগম বলেন, ‘একজন মহিলা দালালের মাধ্যমে গিয়ে কয়েক দিন সৌদির একটি বাসায় কাজ করেছি। শারীরিক নির্যাতন করায় সেখান থেকে পালিয়ে আসি।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নাছরিন আক্তার বলেন, ‘১৪ মাস জেল খেটে বহু কষ্টে দেশে আসছি। আমাকে কেউ নিতেও আসেনি। হাতে কোনো টাকা নেই। কোথায় যাব, কিভাবে যাব জানি না।’

গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব গিয়ে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের নারীরা। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় তাঁরা আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরছেন। তাঁদের অভিযোগ, অমানুষিক পরিশ্রম করানো হলেও বেতন দেওয়া হয় না, ঠিকমতো খাওয়া দেওয়া হয় না। কোনো কিছুতে আপত্তি হলেই চলে নির্মম নির্যাতন। অনেকের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতিত নারীরা পালিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফ হোম কিংবা ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অনেকে জেল খেটে দেশে ফিরছেন। তাঁদের বেশির ভাগকেই পরিবার গ্রহণ করতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

বিমানবন্দরে আলাপকালে জানা যায়, গাজীপুরের কোনাবাড়ীর পারভিন আক্তার দুই মাস আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন স্থানীয় দালাল হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে। সৌদিতে ১৬ সদস্যের এক পরিবারে কাজ দেওয়া হয়েছিল। অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা করানো হয়নি। ফরিদপুরের রোকসানা আক্তারকে কাজ করতে হয়েছে এক মালিকের তিন বাড়িতে। বেতন দেয়নি তিন মাসেও। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার হাজেরা বেগমকে প্রতিদিন বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হতো। টাঙ্গাইলের রুমানা বেগম বলেন, ‘তোরে টাকা দিয়ে কিনে আনছি, বেতন পাবি না। এমন কথা বলত মালিক।’ তিনি একজন

গার্ডের সহায়তায় পালিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দেন। এরপর দেশে ফিরলেন।