সাইনবোর্ডে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বানানো হতো মাদকদ্রব্য

015839rrr_kalerkantho-2018-28-pic

একটি কক্ষের ওপরের দিকে সাইনবোর্ড ঝুলছে। এতে লেখা রয়েছে—গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। প্রাথমিক গণশিক্ষা ব্যুরো। কর্মজীবী শিশুদের জন্য মৌলিক শিক্ষা প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়), হার্ড টু বিচ প্রকল্প। কেন্দ্রের নাম জবা। কেন্দ্রের দরজা পেরোলে চোখে পড়ে একটি শৌচাগার। এর ভেতর দিয়ে আরেকটি দরজা দিয়ে ঢুকতে হয় পাশের কক্ষে। সেই কক্ষেই মাদকদ্রব্য বানানোর আস্তানা।

সাইনবোর্ডে কর্মজীবী শিশুদের এই কথিত শিক্ষাকেন্দ্রের সাইনবোর্ডে আরো লেখা রয়েছে—কেন্দ্র পরিচিতি : ৩ নং বিল্ডিংয়ের নিচে, ওয়ার্ড নং-৫৮ হাজারীবাগ, রোড নং-গণকটুলী সিটি কলোনি। কেন্দ্র চালুর তাং-০১/০৭/২০০৮।

গতকাল রবিবার দুপুরে এই গণকটুলী সুইপার কলোনিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ খুঁজে পেয়েছে এমন সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাদকদ্রব্য তৈরির আস্তানাটি। ভবনের নিচতলার ওই কক্ষে ঢুকে দেখা গেছে, পাঁচটি বড় বড় ড্রামে মাদকদ্রব্য বানানোর সরঞ্জাম রাখা আছে। ভেতর থেকে বেরোচ্ছে উত্কট গন্ধ।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই কলোনিতে অভিযান চালিয়ে ১০৫ জনকে আটক করা হলেও পরে যাচাই-বাছাই করে ৫৫ জনতে ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ৫০ জনকে। তবে মাদকদ্রব্য তৈরির আস্তানাটি যে চালাত সেই সুমনকে পুলিশ ধরতে পারেনি বলে জানা গেছে। প্রায় একই সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেলওয়ে বস্তিতে অভিযান চালিয়ে ৫৪ জনকে আটক করা হয়।

পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সর্দারের নেতৃত্বে পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য, পুলিশের বিশেষ ইউনিটের (সোয়াত) সদস্য ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে গণকটুলী সুইপার কলোনিতে অভিযান চালানো হয়। কারওয়ান বাজার রেলওয়ে বস্তিতে অভিযান চালায় তেজগাঁও জোনের পুলিশ।

রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল্লাহ হিল কাফী কালের কণ্ঠকে জানান, গণকটুলীতে মাদক কারবারিদের কাছ থেকে ৩৬৩টি ইয়াবা বড়ি, দেড় হাজার লিটার চোলাই মদ ও বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টা থেকে গণকটুলীর চারদিকে অবস্থান নিয়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান শুরু করে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত চালানো অভিযানে চার নারীসহ ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, পুলিশ সাঁজোয়া যানসহ এসে গণকটুলীতে ঢোকার সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়। কাউকে বের হতেও দেওয়া হয়নি, কাউকে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি। সুইপার কলোনির ভবনগুলোর সামনে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে লেখা সাইনবোর্ড বসিয়ে দেওয়া হয়। কলোনির ছয়তলাবিশিষ্ট ছয়টি ভবনের প্রায় প্রতিটি কক্ষে অভিযান চালায়। যেসব কক্ষ থেকে মাদক পাওয়া যায় সেসব কক্ষের নারীদেরও আটক করা হয়। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ কারো হাত ধরে, কারো কোমরে ধরে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ে যাওয়ার সময় আটককৃতদের অনেককে হাসতে দেখা যায়। কাউকে কাউকে খালি গায়েও নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

শিক্ষাকেন্দ্রের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাদক কারখানা চালানো ব্যক্তির নাম সুমন। সে চাকরি করে বলে এলাকায় পরিচয় দেয়। তবে গতকাল পুলিশের অভিযানের সময় তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি। তাকে আটকের জন্য অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উপকমিশনার মারুফ হোসেন সর্দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুইপার কলোনির কেউ মাদক সেবনের পারমিশন দেখাতে পারেনি।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে এখান থেকে মাদক কারবারি ধরা পড়েছে।’

তবে পুলিশের এ অভিযানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভবনগুলোর বাসিন্দারা। তাদের কয়েকজন জানায়, গণকটুলীর সুইপার কলোনির লোকজন মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত নয়। অন্য এলাকার লোকজন এসে এখানে মাদক কারবার করে। তাদের ভয়ে কিছু বলা যায় না। তবে এক নারী স্বীকার করে যে তারা বিভিন্ন উৎসবে চোলাই মদ পান করে থাকে। এটাকে তারা অন্যায় মনে করে না।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় দুই নম্বর ভবনের বাসিন্দা লাসমিনের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর মেয়ের জামাই চন্দন ও শ্যামল দাস বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁর কিশোর নাতি সমির ঘুমিয়েছিল। সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ তাঁর বাসায় তল্লাশি শুরু করে। এ সময় দুই মেয়ের জামাই ও নাতিকে আটক করে নিয়ে যায়।

এদিকে কারওয়ান বাজার রেলওয়ে বস্তি থেকে আটককৃতদের মধ্যে চারজন নারীও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার।