মতিঝিলে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি এবারও?

পানি জমে আছে রাস্তায়। এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে ডিঙাতে হয়েছে প্রায় হাঁটুপানি। গতকাল দুপুরে মতিঝিলের সিটি সেন্টারের সামনে।

ভারী বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত বছরের বর্ষায় নিয়মিতভাবে জলাবদ্ধতার শিকার ১৫টি এলাকা চিহ্নিত করেছে প্রথম আলো। এই বর্ষায় ওই এলাকাগুলোকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচাতে সিটি করপোরেশন কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা কতটুকু কার্যকর হবে, নাকি এবারও ডুববে সেসব এলাকা এবং ভুগতে হবে নগরবাসীকে? তার খোঁজখবর নিয়েই এই আয়োজন।

পানিতে ডুবে আছে রাস্তা। এর মধ্য দিয়ে যানবাহন চলছে ঢেউ তুলে। সড়কের কোথায় গর্ত তা বোঝার উপায় নেই। তাই পথচারীরা পা ফেলছে সাবধানে। অনেকে আবার পানি এড়াতে চড়ছে রিকশায়।
গত বছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টি হলেই মতিঝিলে দেখা মিলত এমন দৃশ্যের। এ বছর বর্ষা শুরুর আগে গতকাল রোববারের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে মতিঝিলে দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। পানিতে ডুবে যায় রাস্তাঘাট, ফুটপাত ছাপিয়ে কোথাও পানি ঢুকে যায় দোকানের ভেতরেও।

গত বছর বৃষ্টিতে যেসব এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যেত, তার মধ্যে মতিঝিল ছিল অন্যতম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্কারকাজ করায় মতিঝিলে এবার আর জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু বর্ষা শুরুর আগেই মতিঝিলের এই চিত্র দেখে অনেকের আশঙ্কা, সিটি করপোরেশনের সংস্কারকাজ কাজে আসবে না।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, মতিঝিলের জলাবদ্ধতা হ্রাসে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের আওতায় ১৭ কোটি ৪ লাখ এবং ৯০ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজউক ভবন থেকে আলিকো ভবন এবং জীবন বীমা চত্বর থেকে পিপলস ইনস্যুরেন্স ভবন পর্যন্ত নর্দমা ও ফুটপাতের সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। একই প্রকল্পের আওতায় আরামবাগ হোল্ডিং নম্বর ৯২ থেকে ১৭২ ও বয়েল একাডেমি গলির নর্দমা সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস) প্রকল্পের আওতায় শাপলা চত্বর থেকে ফকিরাপুল ও শাপলা চত্বর থেকে থেকে আর কে মিশন রোডের নিউ নেশন পত্রিকা ভবন পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ফুটপাত ও নালা সংস্কারের কাজ চলছে।
কেস প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, এই এলাকায় জমা পানি নালার মাধ্যমে নেওয়া হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ওয়াসার বক্স কালভার্টে। সেখান থেকে পানি যাবে পূর্বাচলের বালু নদে। মফিজুর রহমান বলেন, বর্ষা শুরুর আগে মে মাস নাগাদ এ কাজ শেষ হবে। তখন এই এলাকার জলাবদ্ধতা থাকবে না।

এই প্রকল্পগুলো ছাড়াও মতিঝিলের জলাবদ্ধতা হ্রাসে আরেকটি প্রস্তাবিত প্রকল্প আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাতে। ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে ওয়াসার বক্স কালভার্ট পর্যন্ত সড়ক ও গলিপথের পাশের নর্দমা মেরামতের কাজে ব্যয় করা হবে ৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

গতকাল সরেজমিনে মতিঝিল এলাকায় দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই দফার বৃষ্টিতে শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলার মোড় পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে পানি জমেছে। ডুবে গেছে সিটি সেন্টারের সামনে থেকে বলাকা চত্বর পর্যন্ত এলাকাও। এই দুই রাস্তার সংযোগস্থল জনতা ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ভবনের অংশে জমেছে সবচেয়ে বেশি পানি। এর ভেতর দিয়ে যানবাহন চলায় একটু পরপরই সৃষ্টি হচ্ছে ঢেউ। সে ঢেউ আছড়ে পড়ছে ব্যাংকের মূল ফটক পর্যন্ত। সেখানে দাঁড়িয়ে পানিতে পা ভেজাতে ভেজাতে আকতারুজ্জামান নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলছিলেন, লম্বা ছুটিতে তো অনেকেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে গিয়েছেন। এখানকার রাস্তায় জমা বৃষ্টির পানি ঢেউ খেলে যেভাবে পায়ে এসে লাগছে, তাতে মনে হচ্ছে, এটিও সমুদ্রসৈকত।

৫ জুলাই ২০১৭: মতিঝিলের রাস্তায় জমে থাকা পানিতে চলছে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও পথচারী। ফাইল ছবি             ৫ জুলাই ২০১৭: মতিঝিলের রাস্তায় জমে থাকা পানিতে চলছে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও পথচারী। ফাইল ছবি ব্যাংকের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মিস্ত্রি
আসলাম বলেন, ‘এই এলাকায় বৃষ্টির পানি জমা নতুন না। ৩০ বছর থেকে এখানে পানি জমতে দেখি। শুধু বর্ষা মৌসুম না, যেকোনো সময় বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে।’
জনতা ব্যাংক ভবন থেকে বলাকা চত্বর পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশেই পানি ছিল হাঁটু পর্যন্ত। এর ভেতর দিয়ে চলা বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি গেলে পানি ছিটকে পড়ছিল দুপাশে।
তুহিন হাবিব নামের অপর এক পথচারী বলেন, এই এলাকার রাস্তার পাশের নালার কাজ শেষ হওয়ার পরও অনেক দিন সেটি উন্মুক্ত ছিল। ময়লা জমে সেটি ভরাট হয়ে গিয়েছিল প্রায়। এ বছর বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি আর পরিষ্কার না করেই ঢেকে দেওয়া হয়। এ কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

গতকালের বৃষ্টিতে মতিঝিলের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। বিআরটিসির বাস কাউন্টারের বিপরীত পাশের যমুনা ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী আশরাফুল সরদার বলেন, গত বছর সড়কে যেভাবে পানি জমত, তাতে এটা রাস্তা না নদী বোঝার উপায় থাকত না।

মধুমতী সিনেমা হলের পাশ থেকে রূপালী ব্যাংক ট্রেনিং সেন্টার ভবন পর্যন্ত চলছে পাইপ বসানোর কাজ। এ জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে রাস্তা। গতকাল খোঁড়া গর্তে জমে যায় পানি। খোঁড়া অংশের মাটি রাস্তার ওপর রাখায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এই পথে। এই সড়কের বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী নিবাসের সামনে এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ১০-১৫ দিন আগে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। এখন কাজ বন্ধ। যে গতিতে কাজ চলছে তাতে বর্ষা পার হয়ে গেলেও কাজ শেষ হবে না।